রায়পুরার ত্রাস, চাদাঁবাজ; অস্ত্রধারী রুবেল বাহিনীর সদস্যদের গ্রেফতার ও শাস্তির দাবীতে মানববন্ধন
ব্যবাসায়ী হাজী নান্নু মিয়াকে হত্যা চেষ্টার ঘটনায়
বাণী রিপোর্ট : রায়পুরার বাজারের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী নিউ রাজ সুপার মার্কেটের মালিক হাজী নান্নু মিয়াকে প্রকাশ্যে গুলি করে ও ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে হত্যা চেষ্টাকারী রায়পুরার ত্রাস, চাদঁবাজ, ইয়াবা ডিলার, ভূমিদস্যু ও অস্ত্রধারী রুবেল বাহিনীর সদস্যদের অবিলম্বে গ্রেফতার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবীতে মানববন্ধন করেছে রায়পুরার সর্বস্তরের জনতা।
৩ মার্চ বৃহস্পতিবার সকাল ১১টায় নরসিংদী প্রেস ক্লাবের সামনে এ মানব বন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। মানব বন্ধন চলাকালে বক্তাগণ বলেন, ব্যবসায়ী হাজী নান্নু মিয়া রায়পুরার মেথিকান্দা এলাকায় জায়গা কিনে সেখানে মৎস চাষ, গরুর খামার স্থাপন ও বাড়ীঘর নির্মাণ করে পরিবার পরিজন নিয়ে শান্তিপূর্ণভাবে বসবাস করতে থাকে। তার বিত্ত বৈভবের উপর চোখ পড়ে রায়পুরার ত্রাস, চাঁদাবাজ, ভূমিদস্যু, চিহ্নিত ইয়াবা ব্যবসায়ী, অস্ত্রধারী একই এলাকার রুবেল বাহিনীর সদস্যদের। সন্ত্রাসী রুবেল বাহিনী ব্যবসায়ী হাজী নান্নু মিয়ার বাড়ীতে গিয়ে আগ্নেয়াস্ত্রের ভয় দেখিয়ে তার নিকট ৫০ লাখ টাকা চাঁদা দাবী করে।
তাদের দাবীকৃত টাকা দিতে অস্বীকার করে চাঁদা দাবীর বিষয়টি প্রশাসন ও পুলিশকে অবহিত করলে ক্ষিপ্ত হয় রুবেল ও তার সহযোগীরা। ঘটনার দিন গত ২০ ফেব্রুয়ারী শনিবার ভোরে প্রতিদিনের মতো ব্যবসায়ী নান্নু মিয়া ফজরের নামাজ শেষে হেটে পার্শ্ববর্তী শ্রীরামপুর রেলগেইট বাজারের দিকে যেতে থাকে। বাড়ী থেকে ১শত গজ দূরে পৌছলে পূর্ব থেকে ওৎপেতে থাকা রুবেল ও তার সহযোগীরা আগ্নেয়াস্ত্র ও ধারালো অস্ত্র নিয়ে হত্যার উদ্দেশ্যে হাজী নান্নু মিয়ার উপর হামলা চালায়। সন্ত্রাসীরা নান্নু মিয়ার মাথা, হাত, পা সহ শরীরের বিভিন্ন অংশে কুপিয়ে গুরুত্বর রক্তাক্ত জখম করে। তার ডাক চিৎকারে পরিবারের সদস্যরা ও স্থানীয় লোকজন এগিয়ে আসতে থাকলে সন্ত্রাসী রুবেল গুলিবর্ষণের মাধ্যমে ত্রাস সৃস্টি করে তার বাহিনীর লোকজন নিয়ে চলে যায়।
মুমুর্ষু অবস্থায় হাজী নান্নু মিয়াকে প্রথমে রায়পুরা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও পরে নরসিংদী সদর হাসপাতালে নেয়া হয়। সেখানে অবস্থার অবনতি হলে দ্রুত তাকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। বর্তমানে তিনি ঢাকা মেডিকেলে কলেজের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন। এ ব্যাপারে ব্যবসায়ী নান্নু মিয়ার স্ত্রী বাদি হয়ে রায়পুরা থানায় ও ছেলে বাদী হয়ে নরসিংদী আদালতে মামলা দায়ের করে। যাহার রায়পুরা থানার মামলা নং -২৭ এবং নরসিংদী আদালতের মামলা নং- রায়পুরা সিআর ১৬২/২২। মামলা দায়েরের পর আরো ক্ষিপ্ত হয় রুবেল বাহিনী ও তাদের পরিবারের লোকজন। তারা নান্নু মিয়ার বিরুদ্ধে নানা অপপ্রচারসহ কুৎসা রটিয়ে পরিবারের সদস্যদের বাড়ী ছেড়ে যাওয়ার হুমকি দিয়েছে অন্যথায় পরিবারের সদস্যদের কেউ প্রাণে বাচঁতে পারবে না বলে প্রচার করছে। আমরা বিশিষ্ট ব্যবসায়ী নিউ রাজ সুপার মার্কেটের স্বত্বাধিকারী হাজী নান্নু মিয়াকে প্রকাশে গুলি করে ও ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে হত্যা চেষ্টাকারী রায়পুরার ত্রাস, চাদঁবাজ, ইয়াবা ব্যবসায়ী, ভূমিদস্যু অস্ত্রধারী রুবেল বাহিনীর সদস্যদের অবিলম্বে গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবী করছি।
উল্লেখ্য ২০২১ সালের আগষ্ট মাসে রুবেল বাহিনী ব্যবসায়ী হাজী নান্নু মিয়ার নিকট প্রথম ৫০ লাখ টাকা চাঁদা দাবী করে পিস্তল উচিয়ে প্রাণ নাশের হুমকী দেয়। তখন ব্যবসায়ী নান্নু মিয়া ও তার পরিবারের সদস্যরা প্রাণ ভয়ে বাড়ী ছেড়ে নরসিংদী শহরে এসে আশ্রয় নেয়। হুমকির বিষয়টি নান্নু মিয়া লিখিতভাবে নরসিংদী জেলা প্রশাসক, আইন প্রয়োগকারী সংস্থা ও নরসিংদী প্রেসক্লাবে অবহিত করে। গত ২২ সেপ্টেম্বর’২০২১ নরসিংদী প্রেসক্লাবের তৎকালিন সাধারণ সম্পাদক মো: মাজহারুল পারভেজ জেলা পুলিশের একজন উর্ধ্বতন কর্মকর্তার সাথে পরামর্শক্রমে উভয় পক্ষের উপস্থিতিতে আপোষ মিমাংসা করে দেয়। রুবেল আর কোন দিন বিরোধ করবেনা বলে লিখিত অঙ্গিকার করে। আপোষ মিমাংসা শেষে রুবেলের আশ্বাসে একমাস পর নান্নু মিয়া তার পরিবারের সদস্যদের নিয়ে বাড়ী ফিরে। আপোষ মিমাংসার ৫ মাসের মাথায় পুনরায় চাঁদাদাবী ও হামলা করে।
রুবেলের পরিবারের লোকজন পূর্ব থেকেই দুর্ধর্ষ। তারা রায়পুরা এলাকায় হত্যা, ভুমিদস্যূতা, চাঁদাবাজি ও মাদক ব্যবসা সহ নানা অপরাধে জড়িত। তাদের পেশী শক্তির ভয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া সত্বেও তাদের বিরুদ্ধে কেউ মুখ খুলতে সাহস পায়না। কারণে অকারণে তারা রায়পুরা এলাকায় ঝগড়া বিবাদসহ আইন শৃংখলার অবনতি ঘটিয়ে থাকে। আবিদ হাসান রুবেলের বাবা হযরত আলী মেথিকান্দা এলাকার মুরব্বী কাশেম হত্যা, রাজনগর এলাকার দ্বৈয়ব জামাল হত্যা মামলার আসামী। জনশ্রুতি রয়েছে কয়েক মাস পূর্বে ইয়াবার চালান সহ সাদা পোষাকধারী আইন প্রয়োগকারী সংস্থার লোকজন মেথিকান্দা রেল স্টেশন থেকে রুবেলকে আটক করে। পরে অদৃশ্য কারণে তাকে ছেড়ে দেয়া হয়। ২০২১ সালে রায়পুরা পৌর শহরের তাত্তাকান্দা এলাকায় আলমগীর খুন হয়। হত্যা কান্ডের পর সর্টগান ও গুলিসহ একজনকে গ্রেফতার করে রায়পুরা থানা পুলিশ। উদ্ধারকৃত সর্টগানটি ভাড়া দিয়েছিলো রুবেল। তার বাহিনীর কাছে রয়েছে কয়েকটি আগ্নেয়াস্ত্র। নজরপুর এলাকার মৃত হোসেন মেম্বারের স্ত্রীকে ভয়ভীতি দেখিয়ে তার জায়গা জোরপূর্বক দখল করে নেয় রুবেল।
এলাকাবাসী আরো জানায়, ২০০৪ রুবেলের পরিবারের সদস্যরা কলা বিক্রি করে সংসার চালাতো। কয়েক বছরের মাঝে তারা চাদাঁবাজি হারমাদি, জবর দখল, মাদক ব্যবসা ও অস্ত্র ব্যবসার মাধ্যমে কোটি কোটি টাকার সম্পদের মালিক বনে যায়। রুবেলের পরিবার ও তার বাহিনী রায়পুরার ত্রাস। তাদের বিরুদ্ধে কেউ মুখ ফুটে কথা বলতে সাহস পায় না। রুবেল বাহিনীর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার দাবী জানিয়েছেন রায়পুরার নিরীহ সাধারণ মানুষ।