নরসিংদীতে ভাগিনাকে অপহরণ ও মুক্তিপণ আদায়ের ঘটনায় পাদুকা ব্যবসায়ী মামা গ্রেফতার
বাণী রিপোর্ট : আপন ভাগিনাকে অপহরণের দায়ে নরসিংদী বাজারের বাটা-ডলফিন সু স্টোরের মালিক ইউসুফ মিয়া (৪৮) কে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
শুক্রবার (২৫ ডিসেম্বর) ভাগিনা আমিন মিয়াকে অপহরণ নির্যাতন ও মুক্তিপণ দাবীর ঘটনায় মামলা দায়ের করা হলে নরসিংদীর বেলাব থানা পুলিশ তাকে গ্রেফতার করেছে ।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, রায়পুরা উপজেলার মির্জারচর গ্রামের মোঃ রুকু মিয়ার স্ত্রী রুফিয়া খাতুন তার মালদ্বীপ ফেরত পুত্র আল আমিন মিয়াকে ব্যবসা দেয়ার জন্য তার ভাই ইউসুফ মিয়ার সাথে আলোচনা করে। ইউসুফ মিয়ার পরামর্শ অনুযায়ী বোন রুফিয়া খাতুন তার ছেলের প্রবাসের উপার্জিত টাকা, বাড়ীর জমি ও গহণা বিক্রির দশ লক্ষ টাকা ইউসুফ মিয়ার হাতে তুলে দেয়।
কথা অনুযায়ী মামার নরসিংদী বাজারের বাটা ও ডলফিন সুজ স্টোরের জুতার দোকানে ব্যবসা শিখার জন্য কাজ করতে থাকে ভাগিনা আল আমিন। দীর্ঘ দিন কাজ শিখার পর আল আমিন তার মামাকে নতুন দোকান নিয়ে দেওয়ার জন্য তাগিদ দিতে থাকে। পরে ইউসুফ মিয়া তার স্ত্রী ও ছেলে হাবিবুর রহমান সনেট বাজারে জুতার দোকান দিয়ে দিবে বলে নানা তালবাহানায় ঘুরাতে থাকে।
এদিকে আল আমিন ও তার পরিবারের লোকজন দোকানের জন্য তাগাদা দেয়ার এক পর্যায়ে ইউসুফ মিয়া পাওনা টাকা দিবে না বলেও হুমকি প্রদান করে। এক পর্যায়ে নরসিংদী বাজার পাদুকা সমিতিতে মামা ইউসুফ মিয়ার বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন আমিন মিয়া।
গত ২৪ সেপ্টেম্বর সকালে নরসিংদীর বেলাব উপজেলার ওয়ারী বটেশ্বর এর প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন দেখতে যায় আমিন । সুযোগ বুঝে বেলাব থেকে একটি নাম্বার বিহীন প্রাইভেটকারযোগে মামা ইউসুফ মিয়া, ছেলে হাবিবুর রহমান সনেট, অজ্ঞাতনামা ৩/৪ জন আমিন মিয়াকে অপহরণ করে নরসিংদী শহরের বানিয়াছল ডায়াবেটিস হাসপাতাল সংলগ্ন ইউসুফ মিয়ার ১০৬/১ বাড়িতে নিয়ে আসে। সেখানে ৬ তলার একটি নির্জন কক্ষে আমিন মিয়াকে হাত পা বেধেঁ মুখে কাপড় গুজে শারিরিকভাবে অমানুষিক নির্যাতন চলায় ইউসুফ গংরা। এ অবস্থায় নির্যাতনকারীরা আল আমিনকে তার আড়ি থেকে আরো ১০ লক্ষ টাকা এনে দেয়ার জন্য চাপ প্রয়োগ করে অন্যথায় তাকে মেরে ফেলা হবে বলে জানায়।
অপহরণের তিনদিন অতিবাহিত হওয়ার এক পর্যায়ে আমিন মিয়া মৃত্যুশয্যায় নিরপায় হয়ে তার মাকে মোবাইলে ১০ লক্ষ টাকা নিয়ে আসতে বলে। আকুতি শুনে রুফিয়া খাতুন ছেলেকে বাঁচানোর জন্য বিভিন্ন লোকের কাছ থেকে ধারদেনা করে নগদ তিন লক্ষ টাকা ও আমিন নিয়ার ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেডের নরসিংদী শাখার স্বাক্ষরিত চেক বই ও ২ ভরি ওজনের স্বর্ণ বিক্রির ১ লক্ষ ২০ হাজার টাকা নিয়ে ইউসুফ মিয়ার তুলে দেয়। পরে আমিন মিয়াকে উদ্ধার করে নরসিংদী সদর হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য ভর্তি করা হয়।
পরবর্তীতে পুনরায় অঘটনের কথা চিন্তা করে সদর হাসপাতাল থেকে ব্রাহ্মণবাড়ীয়ার নবীনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ভর্তি করে চিকিৎসা দেয়া হয়। চিকিৎসা করানোর পাশাপাশি উক্ত বিষয়টি স্থানীয়ভাবে আপোষ মিমাংসার চেষ্টা থাকা অবস্থায় আল আমিন মিয়ার ইসলামী ব্যাংক একাউন্ট থেকে নরসিংদী শাখার চেক নং ৩৭১৩৪৫৯ এর মাধ্যমে ৫ লাখ ৬৩ হাজার টাকা উত্তোলন করে নিয়ে যায় ইউসুফ মিয়া।
এসব ঘটনায় আপন ভাই ইউসুফ মিয়ার নামে নরসিংদীর আদালতে একটি সি আর মামলা দায়ের করেন রুফিয়া খাতুন, যাহার মামলা নং ৩৩২/২০২০ করে। পরে আদালতের নির্দেশে গত ২৩ ডিসেম্বর বেলাব থানায় মামলাটি এফআইআর ভুক্ত হয়। শুক্রবার (২৫ ডিসেম্বর) সন্ধায় বেলাব থানার এসআই রেজাউল ও সঙ্গীয় ফোর্স ইউসুফ মিয়াকে গ্রেফতার করে শনিবার আদালতে সোপর্দ করে। বিজ্ঞ আদালত ইউসুফ মিয়াকে জেল হাজতে প্রেরণের নির্দেশ দেন।
এ ব্যাপারে নরসিংদী বাজারের পাদুকা মালিক সমিতির ব্যবসায়ীসহ ১৪ জনকে আল আমিন মিয়া অপরহরণের প্রত্যক্ষভাবে সাক্ষী করা হয়েছে মামলায় । সাক্ষীগণ হলেন, নরসিংদী বাজার পাধুকা মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক কামরুজ্জামান ,নরসিংদী বাজার পাদুকা মালিক সমিতির সহ-সভাপতি আবু তালেব, নরসিংদী বাজার পাধুকা মালিক সমিতির সদস্য শাহজাহান,সদস্য জয়নাল মিয়া, নরসিংদী লাইব্রেরী সমিতির সভাপতি আব্দুল্লাহ সরকার, আব্দুল কাইয়ুম ,মোহাম্মদ কাউসার মিয়া ,ইউনুস আলী, মোসাম্মৎ পারভীন এবং কর্তব্যরত চিকিৎসক জরুরী বিভাগ সদর হাসপাতাল নরসিংদী।
এ ব্যাপারে আমিন মিয়ার অপহরণকারীদের উপযুক্ত শাস্তি কামনা করেছেন নরসিংদী বাজারের পাদুকা ব্যবসায়ীবৃন্দ।