মাধবদীর পৌর মেয়র মোশাররফপন্থী দুই গ্রুপের সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ- ২
নিজস্ব প্রতিবেদক: আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে নরসিংদীর মাধবদী পৌরসভার মেয়র মোশাররফ হোসেন প্রধান মানিক এর আস্থাভাজন হিসেবে পরিচিত তার ভাগিনা আরিফ ও আহাদ গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে।
এতে আহাদ গ্রুপের সদস্য পৌরশহরের বিরামপুর এলাকার জাকির হোসেনের ছেলে সাব্বির (২৪) ও আরিফ গ্রুপের সদস্য মেয়র মোশাররফের ভাগিনা নুরালাপুর গ্রামের কাইয়ুম মিয়ার ছেলে আশিক(২৮) গুলিবিদ্ধ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে।
রবিবার ( ১৩ ডিসেম্বর) রাত পৌনে এগারোটার দিকে মাধবদী এসপি ইনস্টিটিউশনের ভিতরের মাঠে বিবদমান দুইগ্রুপের মধ্যে এঘটনা ঘটে।
খবর পেয়ে মাধবদী থানার ওসি সৈয়দুজ্জামান ও ওসি তদন্ত তানভীর আহমেদ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। সংঘর্ষ ও আহত হওয়ার বিষয় টি নিশ্চিত করেন ওসি।
এদিকে ঘটনাটিকে ধামাচাপা দিতে ঘটনার পরপর মাধবদী পৌরসভার মেয়র মোশাররফ হোসেন মানিক ও নরসিংদী চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের প্রেসিডেন্ট আলী হোসেন শিশির পুলিশ কর্মকর্তাদের সাথে ঘন্টাব্যাপী বৈঠক করেন। এসময় মাঠের ভিতরে সাংবাদিকসহ সুধী সমাজের কাউকে ঢুকতে দেয়া হয়নি। প্রত্যক্ষদর্শীরা ঘটনাস্থল থেকে পুলিশ কর্তৃক গুলির খোসাসহ বিভিন্ন আলামত উদ্ধারের কথা জানালেও পুলিশ এব্যপারে কথা বলতে অস্বীকৃতি জানায়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, ব্যাডমিন্টন খেলাকে কেন্দ্র করে রবিবার সন্ধ্যার পরে মাধবদী এসপি স্কুলের ভিতর মাঠে আহাদ গ্রুপের লোকজন আরিফ গ্রুপের লোকজন মারধোর করে। খবর পেয়ে আরিফ ঘটনাস্থলে এসে এলোপাতাড়ি গুলি ছোড়ে। এতে তারই খালাতো ভাই আশিক ও প্রতিপক্ষ গ্রুপের সাব্বির গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হয়।
আহতদেরকে প্রথমে স্থানীয় হাসপাতালে ও পরে একজনকে ঢাকার অ্যাপোলো হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। নরসিংদীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) শাহেদ আহমেদ, জেলা গোয়েন্দা শাখার পুলিশ পরিদর্শক (নিঃ) রুপন কুমার সরকার, মাধবদী থানার ওসি সৈয়দুজ্জামানসহ পুলিশ বিভাগের বিভিন্ন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন বলে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে।
ওসি সৈয়দুজ্জামান জানান, এ ঘটনায় কোন পক্ষ থানায় অভিযোগ দায়ের করেনি। এ ব্যাপারে খোঁজ নেয়া হচ্ছে।
মামার ক্ষমতায় পাকাপোক্ত হাতিয়ার হিসেবে কাজ করতে তখন সে নরসিংদী সদর থানা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদকের পদ ছেড়ে তার দুই মামা মাধবদী পৌর মেয়র মোশাররফ হোসেন মানিক ও নরসিংদী চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের প্রেসিডেন্ট আলী হোসেন শিশিরের নেতৃত্বে তৎকালীন পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী ও নরসিংদী সদরের এমপি লেঃকঃ (অবঃ) নজরুল ইসলাম হিরু বীরপ্রতীক হাতে ফুল দিয়ে আওয়ামীলীগে যোগদান করে।
এরপর থেকেই সে চরম বেপরোয়া হয়ে ওঠে। কারণে অকারণে মানুষকে ধরে এনে মারধর, গোলাগুলিসহ নানা অপকর্মে সে লিপ্ত হয়ে পড়ে। থানায় জমা হয় তার নামে একের পর এক মামলা।
মেয়রের ছত্রছায়ায় পৌরসভার এক কর্মকর্তার বিশ্রামকক্ষ তখন সে দখল করে নিজের অফিস বানিয়ে সেখানে নিয়মিত অবস্থান করতে থাকে। সময়ের ব্যবধানে তার জায়গায় মেয়র মোশাররফ বিরামপুরের হাজী নান্নু মিয়ার ছেলে আহাদকে পৌরসভার বিভিন্ন কাজের দায়িত্ব দেয়। এনিয়ে আহাদ এর প্রতি আরিফের ক্ষোভ তৈরি হতে থাকে। এছাড়া আগে থেকেই আহাদদের বাড়িতে মেয়রের যাওয়া আসার বিরোধিতা করতো আরিফ। সবমিলিয়ে মেয়র মোশাররফের সাথে আরিফের দূরত্ব বাড়তে থাকে। আর মামা-ভাগিনার এই দূরত্বের পুরো ফায়দা উঠায় আহাদ। অর্থ এবং ক্ষমতায় ক্রমেই আহাদ গ্রুপ শক্তিশালী হয়ে উঠে।
সম্প্রতি, আহাদ জার্মানির বিখ্যাত ওডি কোম্পানির নতুন মডেলের একটি ব্র্যান্ড নিউ প্রাইভেট কার ক্রয় করে। এসব নিয়ে আরিফ গ্রুপের সাথে তার বিরোধ চরম পর্যায়ে পৌঁছে। আর এর জের ধরেই এই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এঘটনায় গোটা এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।
এর আগে খোদ মেয়রের বিরুদ্ধেও পিস্তল উঁচিয়ে এক ব্যবসায়ীকে ধাওয়া করার অভিযোগ উঠে। মাধবদীতে শান্তিপ্রিয় মানুষের বসবাস। এখানে একেএকে এমন গোলাগুলির ঘটনা ঘটতে থাকলে এবং এসবের সঠিক বিচার না হলে আইনের শাসনের প্রতি মানুষের অনাস্থা তৈরির পাশাপাশি ব্যবসা বাণিজ্যও বাধাগ্রস্ত হবে বলে মাধবদীর সচেতন নাগরিকবৃন্দের অভিমত।