রায়পুরার আল সাবাহ হাসপাতালে সিজার করতে গিয়ে প্রসূতীর মৃত্যু, সাড়ে তিন লাখ টাকায় রফাদফা
বাণী রিপোর্ট : হাতুরি ডাক্তার দিয়ে সিজার করতে গিয়ে ভূল চিকিৎসায় সালমা আক্তার (২০) নামে এক প্রসূতীর অকাল মৃত্যু হয়েছে।বুধবার (৯ ডিসেম্বর) রাতে নরসিংদীর রায়পুরা পৌর শহরের কামারবাড়ী মোড়ে অবস্থিত আল সাবাহ হাসপাতালে এ ঘটনা ঘটে।অপ চিকিৎসায় নিহত প্রসূতি গৃহবধূ সালমা আক্তার রায়পুরা উপজেলার আদিয়াবাদ পিপিনগর গ্রামের প্রবাস ফেরত বশির মিয়ার স্ত্রী।
প্রসূতীর স্বামী ও স্বজনরা জানায়, প্রসব ব্যথা শুরু হলে সালমাকে রায়পুরা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসা হয়। পরে সেখান থেকে ভালো ডাক্তার দেখানোর জন্য আল সাবাহ হাসপাতালে নিয়ে আসে অভিভাবকরা। আল সাবাহ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ নাম মাত্র পরীক্ষা করে জানায়, চিন্তার কোন কারন নেই প্রসূতীর নরমাল ডেলিভারী হবে। তাদের কথায় আস্বস্ত হয়ে অভিভাবকরা সালমাকে সেখানে ভর্তি করে।ভর্তির কিছু সময় পর রাতে হাসপাতাল এর লোকজন জানায়, বাচ্চার পজিশন খারাপ এখনই সিজার করতে হবে। পরে অভিভাবকদের সাথে রফাদফা শেষে প্রসূতীর সিজার করা হয়।এর কয়েক মিনিট পর কথিত ডাক্তার ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ প্রসূতীর অভিভাবকদের জানান এখনি জরুরি ভিত্তিতে প্রসূতীকে রক্ত দিতে হবে।
অভিভাবকদের একজন রক্ত দিতে প্রস্তুত হলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এ্যাম্বুলেন্স ডেকে প্রসূতীকে ঢাকা নিয়ে যেতে বলে। ইতোমধ্যে কথিত ডাক্তার ও হাসপাতালের মালিকপক্ষ কৌশলে পালিয়ে যায়।হাসপাতল কর্তৃপক্ষের আচরণে সন্দেহ হলে অভিভাবকরা প্রসূতীর কাছে গিয়ে দেখতে পায় তার নিথর দেহ অপারেশন থিয়েটারে পড়ে আছে। রোগীর শ্বাস প্রশ্বাস নেই। শুরু হয় স্বজনদের আহাজারী। হাসপাতাল এর আশেপাশে স্হানীয় লোকজন ভীড় জমায়।
পরে রাতারাতি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ স্থানীয় পেশীশক্তিধারীদের মাধ্যমে নিহতের স্বজনদের চাপ সৃষ্টি করে থানায় অভিযোগ করা থেকে বিরত রাখে। মৃতের স্বজনদের সাথে সাড়ে তিন লাখ টাকার একটি মৌখিক চুক্তির মাধ্যমে রফাদফা করা হয়। চুক্তির পর পরই প্রতিষ্ঠানটি পূর্বের ন্যায় কার্যক্রম শুরু করতে দেখা গেছে।
এদিকে, হাসপাতালে অনভিজ্ঞ ডাক্তারের হাতে প্রসূতীর মৃত্যুর ঘটনার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লেও অজ্ঞাত কারনে স্থানীয় প্রশাসনের দৃষ্টিগোচর হয়নি এমন অভিযোগ সচেতন মহলের।
নিহতের স্বামী বশির মিয়া বলেন, আমার স্ত্রীর মতো আর কারো জীবন যেন হাতুরী ডাক্তারের হাতে দিতে না হয় সেজন্য আইনের আশ্রয় নিতে চাইছিলাম। কিন্তু আমাকে কিছু লোক তা করতে দেয়নি। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আমাকে সাড়ে তিনলাখ টাকা দিবে বলে আমার শ্বশুর সহ কিছু লোকজন জোড় করে মামলা করতে বাঁধা দেয়। তাই জানাযা শেষে লাশ দাফন করে ফেলেছি। টাকা হাতে পেয়েছেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, এখনো পাইনি।
আল-সাবাহ হাসপাতালের মালিক বায়েজিদ মিয়া বলেন, পুরুষ ও মহিলা দুজন ডাক্তার সিজার করেছে। তারা দুজনই অভিজ্ঞ। ঐদিন সকালেও আরো দুটি সিজার আল্লাহর রহমতে সুন্দরভাবে সম্পন্ন হয়েছে। এই ঘটনাটিতে ডাক্তারের কোন ভুল ছিলনা। ধারনা করা হচ্ছে রোগী স্ট্রোক করেছে।
রায়পুরা থানার সেকেন্ড অফিসার দেব দুলাল বলেন, শুনেছি ঘটনাটি দু’পক্ষের মধ্যে মিমাংসা হয়ে গেছে।
রায়পুরা উপজেলা স্বাস্থ্য ও প: প: কর্মকর্তা ডা: আবু সাঈদ মোহাম্মদ ফারুক বলেন, কিছু দিন পূর্বে উক্ত প্রতিষ্ঠানে উপযুক্ত কাগজপত্র দেখাতে না পারায় এক ডাক্তারকে ভ্রাম্যমান আদালতের মাধ্যমে এক লাখ টাকা অর্থদন্ড প্রদান করা হয়েছিল। এই ঘটনাটিও আমি আমার উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানাবো।
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. শফিকুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, কিছুক্ষন আগে ফেসবুকের একটি পোস্ট নজরে পড়েছে। বিষয়টি আমি খোঁজ নিয়ে দেখছি।
স্থানীয় সচেতন মহলের মতে, দেশের একজন নাগরিক রাষ্ট্রের সম্পদ। অভিভাবকরা ইচ্ছা করলেই সব ঘটনা ধামাচাপা দিতে পারে না। এ ব্যাপারে সরকারের প্রশাসন ও আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর দায়িত্ব রয়েছে। প্রসূতীর মৃত্যুর কারণ ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের উদাসীনতার বিষযটি তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন তাঁরা।