ধর্ষক ছাত্রলীগ নেতা শাকিলের সহযোগী সুমন গ্রেফতার, ভিকটিমের ডাক্তারী পরীক্ষা সম্পন্ন
বাণী রিপোর্টঃ বিয়ের প্রলোভনে ফেলে রায়পুরা টেকনিক্যাল স্কুল এন্ড কলেজের দশম শ্রেণীর ছাত্রীকে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে ধর্ষণ করার অভিযোগে রায়পুরা উপজেলার ছাত্রলীগ সভাপতি আসাদুল হক চৌধুরী শাকিল এর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে। ধর্ষিতা স্কুলছাত্রী বাদী হয়ে শুক্রবার রায়পুরা থানায় মামলা দায়ের করেন। মামলা নং-৩৫। মামলা দায়েরের পর পুলিশ শুক্রবার বিকেলে ভিকটিমের প্রয়োজনীয় ডাক্তারী পরীক্ষার জন্য নরসিংদী সদর হাসপাতালে প্রেরণ করেন। গতকাল শুক্রবার ও আজ শনিবার ভিকটেমের ডাক্তারী পরীক্ষা সম্পন্ন করা হয়।
মামলা দায়েরের পর থেকে শাকিলকে খুঁজছে পুলিশ। ধর্ষক ছাত্রলীগ নেতা শাকিলকে গ্রেফতার করতে বিভিন্ন স্থানে পুলিশ অভিযান চালিয়েছে। শাকিলকে গ্রেফতার করতে রাজিউদ্দিন আহম্মেদ রাজু অডিটরিয়ামের বিভিন্ন কক্ষে রায়পুরা উপজেলা নির্বাহী অফিসারের উপস্থিতিতে তল্লাশী চালায় পুলিশ। যে কক্ষে ভিকটিমকে ধর্ষণ করা হয়েছে সে কক্ষ থেকে পুলিশ বিভিন্ন আলামত সংগ্রহ করেছে। আলামত উদ্ধারের ঘটনায় সংশ্লিষ্টদের ধারনা ধর্ষনের আগে ও পরে কক্ষটিতে মাদক সেবন করা হয়েছে।
ধর্ষক ছাত্রলীগ নেতা আসাদুল হক চৌধুরী শাকিলকে খুজে না পেলেও তার অপকর্মের সহযোগী রাজু অডিটরিয়মের কেয়ার টেকার সুমনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। সুমন মিয়া ধর্ষণ মাললার এজাহারভুক্ত আসামী।
এ ঘটনার পর আজ শনিবার (২৪ অক্টোবর) রায়পুরার রাজিউদ্দিন আহম্মেদ রাজু অডিটরিয়াম পরিদর্শন করেন অডিটরিয়ামের কর্তৃপক্ষ নরসিংদী জেলা পরিষদ। পরিদর্শনকালে উপস্থিত ছিলেন জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল মতিন ভূইয়া, জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আবু নাসের, রায়পুরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো: শফিকুল ইসলাম, উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি আফজাল হোসাইন, ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক ইমান উদ্দিন ভূইয়া ও দলীয় নেতৃবৃন্দ।
এসময় সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মতিন ভূইয়া, জানান, ধর্ষকের স্থান আওয়ামীলীগ ও তার অঙ্গসংগঠনে নেই। শাকিলকে ছাত্রলীগ থেকে বহিষ্কারের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে জেলা ছাত্রলীগ নেতৃবৃন্দকে। জেলা ছাত্রলীগের নেতারা আমার সাথে যোগাযোগ করেছে।
জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আবু নাসের জানান,অডিটরিয়ামের দায়িত্ব রায়পুরা উপজেলা নির্বাহী অফিসারের উপর ন্যাস্ত করা হয়েছে। কেয়ার টেকার সুমনকে স্থায়ীভাবে চাকুরী থেকে বহিষ্কার করে সেখানে নতুন কেয়ারটেকার নিয়োগ করা হয়েছে। তিনি বলেন,করোনার পূর্বে আবাসিক কক্ষ ভাড়া হতো, করোনাকালীন ভাড়া দেয়া হয়নি। কেয়ারটেকারের সাথে যোগাযোগ করে তারা অডিটরিয়ামের ভিতরে প্রবেশ করে থাকে।
নরসিংদী সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. সৈয়দ আমিরুল হক শামীম জানান, গতকাল ও আজ ভিকটিমের বিভিন্ন শারিরিক পরীক্ষা করা হয়েছে। এ বিষয়ে গঠিত মেডিকেল বোর্ডের মাধ্যমে ভিকটিমের রিপোর্ট আদালাতে পেশ করা হবে।
ধর্ষকের শাস্তির দাবীতে সোচ্চার, রায়পুরার সর্বমহলে আলোচনা সমালোচনার ঝড় বইছে। তারা ধর্ষককে দ্রুত গ্রেফতার করে আইন প্রয়োগ করার দাবী জানিয়েছেন।
উল্লেখ্য, মামলা ও পারিবারিক সূত্রে জানাযায়, ছাত্রলীগ নেতা শাকিলের সাথে ভিকটিমের ৬ মাস ধরে প্রেমের সম্পর্ক চলে আসছে। বিয়ে করার কথা বলে বৃহস্পতিবার (২২ অক্টোবর) বিকেলে ভিকটিমকে রাজু অডিটরিয়ামে ডেকে আনা হয়। সেখানে বিয়ের আয়োজন না থাকায় ভিকটিম সন্ধ্যায় বাড়ী চলে যায়। রাত ৯টায় ছাত্রলীগ নেতা শাকিল কাজীর মাধ্যমে বিয়ে হবে এবং সকল প্রস্ততি সম্পন্ন এমন প্রলোভনে ফেলে স্কুল ছাত্রীকে পুনরায় অডিটরিয়ামের ৩য় তলার একটি কক্ষে ডেকে আনে। সেখানে শাকিল, ভিকটিমের সাথে শারিরিক সম্পর্ক স্থাপন করতে চাইলে সে আপত্তি জানায়। পরে শাকিল ভিকটিমকে অচেতন করতে তরল পানীয় পান করিয়ে তার সাথে শারিরিক সম্পর্ক স্থাপন করে। কিছুক্ষণ পর তাকে ধর্ষণ করা হয়েছে টের পেয়ে চিৎকার শুরু করলে আশে পাশের লোকজন এগিয়ে আসে।
এসময় স্থানীয়রা ঘটনা টের পেয়ে অডিটোরিয়াম ঘেরাও করলে শাকিল ওই স্কুল ছাত্রীকে অডিটরিয়মের কক্ষে তালাবদ্ধ অবস্থায় ফেলে কৌশলে পালিয়ে যায়। পরে “৯৯৯” এ কল করে অবগত করা হলে,রায়পুরা থানা পুলিশ ভিকটিমকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসে।
ভিকটিমের বাবা জানান,আমার মেয়ের উপর অমানুষিক নির্যাতন চালিয়েছে ছাত্রলীগ নেতা শাকিল,আমি এর উপযুক্ত বিচার চাই। ধর্ষণের বিষয়টি এখন ‘রায়পুরার টক অব দা টাউন’। স্থানীয়রা জানায়,কিছুদিন পরপরই ছাত্রলীগ নেতা শাকিল মেয়েটিকে রাতের বেলায় অডিটোরিয়ামে ডেকে নিয়ে আসত। মেয়ের পরিবারের লোকজন নিরীহ হওয়ায় প্রভাবশালী ছাত্রলীগ নেতার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে সাহস পেত না। এই ঘটনা ধামাচাপা দিতে ও অভিযুক্ত শাকিলকে বাঁচাতে নরসিংদী ও রায়পুরার একটি প্রভাবশালী মহল থেকে জোর তদবির চালিয়ে যাচ্ছে।
রায়পুরা উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আফজাল হোসাইন বলেন,আমি এই ঘটনা শুনেছি।শাকিল ছেলেটি খুবই বাজে।এর আগেও তার বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ আমি পেয়েছি।আমি এই ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাই ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘জাতির জনক বঙ্গবন্ধু হলের’ পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক ও ডুসারের সাবেক সভাপতি মোঃ সাইফুল আলম জানান,আমি নিজে ও ছাত্রলীগের কর্মী। ছাত্রলীগে কোন কুলাঙ্গারের স্থান নেই, এসব কুলাঙ্গারের জন্যই ছাত্রলীগের বদনাম হয়। দলীয় পদ থাকায় যাতে বিচার প্রক্রিয়া বাঁধা গ্রস্থ না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।দল মত নির্বিশেষে আমরা সবাই এটার সুষ্ঠু বিচার চাই। ছাত্রলীগ এর অবস্থান সর্বদা ধর্ষণের বিরুদ্ধে।