নরসিংদীতে মাদ্রাসা ছাত্রের উপর অমানুষিক নির্যাতন, প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা
বাণী রিপোর্ট : নরসিংদীতে মাদ্রাসা ছাত্রের উপর অমানুষিক নির্যাতনের অভিযোগ পাওয়া গেছে। বেধরক পিটিয়ে আহত করা হয়েছে কিশোর শিক্ষার্থীকে। ছাত্র নির্যাতনকারী শিক্ষকের অপসারনসহ বিচার দাবী করেছেন শিক্ষার্থীর অভিভাবক ও প্রত্যক্ষদর্শী স্থানীয় জনতা।
নরসিংদী শহরের বৌয়াকুড় মেরাজুল উলুম মাদ্রাসায় হাফেজি পড়ুয়া ছাত্র ইব্রাহিম(১৩) এর উপর অমানুষিক নির্যাতন চালায় শিক্ষক হাফেজ রফিকুল ইসলাম। উক্ত শিক্ষকের বেত্রাঘাতের এক পর্যায়ে শ্রেণী কক্ষের মেঝেতে লুটিয়ে পড়ে কিশোর ছাত্র ইব্রাহিম। তারপরও রেহাই পাইনি নির্যাতন থেকে। পা থেকে মাথা পর্যন্ত শরীরের বিভিন্ন অঙ্গে বেত্রাঘাতের রক্তাক্ত চিহৃ ফুটে উঠে। অসহ্য যন্ত্রণায় ছটফট করতে থাকে শিক্ষার্থী ইব্রাহিম।
ইব্রাহিমের মা খবর পেয়ে স্থানীয় লোকজনের সহায়তায় ছেলেকে উদ্ধার করে বাড়িতে নিয়ে যায়।শিক্ষার্থীর পারিবারিক সূত্র জানায়, রায়পুরা উপজেলার হাইরমারা ইউনিয়নের বীরকান্দি গ্রামের মালয়েশিয়া প্রবাসী শফিকুল তালুকদারে ছেলে ইব্রাহিম। কোরআনে হাফেজি পড়ানোর জন্য বৌয়াকুড় মেরাজুল উলুম মাদ্রাসায় ভর্তি করেন ইব্রাহিমের মা মুরশিদা বেগম।
নিরীহ ও মেধাবী ইব্রাহিম মাদ্রাসায় ভর্তি হওয়ার পর থেকেই মাদ্রাসা শিক্ষক হাফেজ রফিকুল ইসলাম অহেতুক সন্দেহবশত: তার উপর ভিন্ন ভাবে মানুষিক নির্যাতন করে আসছিল।ঘটনার দিন গত ২১ আগস্ট সকালে বেয়াদবির অজুহাতে শিক্ষক রফিকুল ইসলাম শিক্ষার্থী ইব্রাহিম উপর শারীরিক নির্যাতন চালায়।প্রবাসী পিতার অবর্তমানে মা মুরশিদা বেগম প্রতিকার চেয়ে মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষসহ এলাকাবাসীর কাছে এই নির্যাতন অত্যাচারে বিচার দাবী করে।এ সময় উপস্থিত জনতা উত্তেজিত হয়ে ওঠলে তাদের শান্ত করতে এলাকার গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গের মধ্যস্থতায় ঘটনার মীমাংশার আশ্বাস আশ্বাস দেওয়া হয়।
তাৎক্ষণিক নির্যাতনকারী শিক্ষক হাফেজ রফিকুল ইসলামকে সাময়িক বরখাস্ত করে মাদ্রাসা কতৃপক্ষ।মাদ্রাসার পরিচালনা কমিটি ও শিক্ষকদের নিয়ে শালিশীর মাধ্যেমে ঘটনার মিমাংশা করার কথা থাকলেও তা করা হয়নি।শালিশীতে না বসেই মাদ্রাসার প্রিন্সিপ্যাল মাওলানা ইসমাইল নূরপুরী ও সেক্রেটারী শওকত আলী মুন্সী দু’জনে মিলে শালিশ ছাড়াই নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটি, শিক্ষক ও এলাবাসীকে বৃদ্ধাঙ্গুল দেখিয়ে কিশোর নির্যাতনকারী শিক্ষক হাফেজ রফিকুল ইসলামকে পুন:বহালকরে।প্রিন্সিপাল এর এহেন আচরনে অভিভাবক ও এলাকীবাসী ক্ষুদ্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন।
তারা বলেন, কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্র/ছাত্রীর উপর শারীরিক ও মানষিক নির্যাতন করা যাবে না। এ ক্ষেত্রে সরকারের কঠোর নিষেধাজ্ঞা ও বিধি নিষেধ রয়েছে। কিন্তু সরকারের কঠোর নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধান হয়েও তা তারা মানেনি। শিশু ও কিশোর নির্যাতনকারী ছাত্র পেটানো শিক্ষক হাফেজ রফিকুল ইসলামের উপযুক্ত বিচার দাবী করেন এলাকাবাসী। এ ব্যাপারে তারা নির্যাতনকারী শিক্ষকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য উপজেলা ও জেলা প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
এদিকে মাদ্রাসার পক্ষ থেকে নির্যাতিত ছাত্র ইব্রাহিমের অসহায় মা মুরশিদা বেগমকে ভয়ভীতি দেখিয়ে সাদা কাগজে স্বাক্ষর নেয়া হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। স্বাক্ষর এই জন্য নেয়া হয়েছে, যাতে ইব্রাহিমের মা কোন আভিযোগ ও আইনী ব্যবস্থা গ্রহণ করতে না পারে। স্বাক্ষরের বিষয়টি মাদ্রাসার সংশ্লিষ্টরা স্বীকার করেছেন।
এ ব্যাপারে জানার জন্য প্রিন্সিপালের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তার সাথে কথা বলা যায়নি।