করিমপুর বাজার ইজারা না নিয়ে চাঁদাবাজি, ৩ মাসে হাতিয়ে নিয়েছে প্রায় ২৫লক্ষ টাকা
সরকার হারিয়েছে বিপুল অংকের রাজস্ব
বাণী রিপোর্ট : নরসিংদী সদর উপজেলার চরাঞ্চল করিমপুর বাজার ইজারা না নিয়েই সাবেক ইজারাদার বিল্লাল মিয়া কর্তৃক ব্যপক চাঁদাবাজির অভিযোগ পাওয়া গেছে। সরকারী নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে গত তিন মাসে সাবেক ইজারাদার বাজারের ক্রেতা-বিক্রেতাদের কাছ থেকে হাতিয়ে নিয়েছে প্রায় ২৫লক্ষ টাকা। সরকার হারিয়েছে বিপুল অংকের রাজস্ব।
জানা যায়, বাংলা ১৪২৭ সালে কাঙ্খিত দর না পাওয়ায় বাজার ইজারা প্রদান করেনি নরসিংদী সদর উপজেলা প্রশাসন। ১ এপ্রিল’২০ বাজারের ইজারা কার্যক্রম শেষ হয়। সাবেক ইজারাদার বিল্লাল মিয়া কাঙ্খিত দরের চেয়ে কম ডাক দেয়ায় বাজার ইজারা না পেয়ে পে-অর্ডার ফেরত নেয়। পরবর্তীতে ১৪ এপ্রিল থেকে ১৪ জুলাই পর্যন্ত অবৈধভাবে বাজারের ক্রেতা-বিক্রেতাদের কাছ থেকে তার পালিত সন্ত্রাসীদে মাধ্যমে জোরপূর্বক চাঁদা আদায় করে। বাজারের স্থায়ী ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে বিনা রশিদে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নেয়। কখনো টোল আদায়ের রশিদ দিয়ে আবার কখনো রশিদ ছাড়াই টোল আদায়ের নামে চাঁদা আদায় করেছে চাঁদাবাজচক্র।
সরেজমিনে বাজার পরিদর্শনে গেলে স্থানীয়রা জানায়, প্রতি মঙ্গলবার করিমপুর বাজারের সাপ্তাহিক হাটবার। হাটবারে প্রায় সাড়ে তিন হাজার স্থায়ী-অস্থায়ী দোকান পাটের মালিকদের নিকট থেকে সাবেক ইজারাদার বিনা রশিদে টাকা আদায় করেছে। দুইশত টাকার পুঁজিধারী ঝালমুড়ি বিক্রেতার নিকট থেকে হাটবারে আদায় করেছে রশিদবিহীন ৫০টাকা চাঁদা । গড়ে দোকান প্রতি ৫০টাকা হারে আদায় করলে সাপ্তাহিক হাটবারে সাড়ে তিন হাজার দোকান থেকে আদায় করা হয়েছে (৩৫০০×৫০)=১৭৫০০০ (একলক্ষ পঁচাত্তর হাজার) টাকা । এ হিসেবে ১৪এপ্রিল থেকে ১৪জুলাই পর্যন্ত ১৪সপ্তাহে ইজারাদার বিল্লাল মিয়া বে-আইনিভাবে চাঁদা আদায় করেছে মোট (১৭৫০০০×১৪)=২৪,৫০,০০০ (চব্বিশ লক্ষ পঞ্চাশ হাজার) টাকা।
বাজারের ব্যবসায়ীরা জানায়, শুধু তা-ই নয় প্রতিটি স্থায়ী দোকান থেকে একসাথে দশ হাজার থেকে শুরু করে ষাট হাজার টাকা পর্যন্ত এ বছর বিনা রশিদে এককালীন টাকা আদায় করেছে ইজারাদার। হাটবারে প্রতিটি স্থায়ী অস্থায়ী দোকানপাট থেকে ৫০টাকা থেকে ২০০টাকা পর্যন্ত তাদের ইচ্ছামতো আদায় করে থকে। সাপ্তাহিক হাটবার ছাড়া প্রতিদিন কাঁচা মালের বিক্রেতা ও অস্থায়ী দোকানদারদের কাছ থেকে নিয়ম বহির্ভূতভাবে আদায় করা হয় টাকা। প্রতি হাটবারে করিমপুর বাজার থেকে প্রায় শতাধিক ছোট ছোট ডিঙ্গি নৌকা বিক্রি হয়ে থাকে প্রতিটি নৌকার ক্রেতা বিক্রেতাদের কাছ থেকে ২শত থেকে ১হাজার টাকা পর্যন্ত টোল আদায়ের নামে চাঁদা আদায় করা হয়। বাজারে টোল চার্ট না থাকায় সাধারণ ক্রেতা বিক্রেতাগণ ইজারাদারের নির্ধারিত টাকা টোল দিতে বাধ্য হয়।
তাছাড়া সাবেক ইজারাদার বিল্লাল মিয়া ও তার সহযোগী চিহ্নিত সন্ত্রাসী ও খুনের মামলার আসামী নিজেদেরকে স্থানীয় প্রভাবশালী একজন শিল্পপতি ও বিশিষ্ট সমাজ সেবক এর লোক বলে দাবী করে থাকে। তাই ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার ভয়ে সাধারণ ব্যবসায়ীরা তাদের বিরুদ্ধে মুখ খুলতে সাহস পায়না। এবছর ও বিল্লাল মিয়া তিন মাস যাবত বাজার ইজারা না নিয়েই অবৈধভাবে টোলের নামে চাঁদা আদায় করেছে। গত ২১জুলাই স্থানীয় ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা সরকার নির্ধারিত টোলচার্ট স্থাপনের করে পাকা রশিদের মাধ্যমে খাস আদায় করতে থাকলে আমরা জানতে পারি বাজার ইজারা হয়নি। অবৈধভাবে বিল্লাল মিয়া এতদিন টোলের নামে চাঁদা আদায় করেছে। বিক্রেতার কাছ থেকে টোল আদায়ের নিয়ম থাকলেও সে ক্রেতা-বিক্রেতার কাছ থেকে নির্ধারিত টোলের শতগুন বেশী চাঁদা আদায় করে। খাস কালেকশনের দিন গত ২১জুলাই তার লোকজন জোরপূর্বক দশজন ডিঙ্গি নৌকা ক্রেতার নিকট থেকে প্রায় ১০হাজার টাকা চাঁদা আদায় করে। জানতে পেরে খাস আদায়কারী নায়েব এর হস্তক্ষেপে চাঁদা আদায়কারীরা বাজার ছেড়ে পালিয়ে যায়।
এ ব্যপারে করিমপুর বাজারের সাবেক ইজারাদার বিল্লাল মিয়া বলেন, এবছর ১৪২৭বাংলা সনের ইজারার জন্য আমি নরসিংদী সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয় থেকে নির্ধারিত তারিখে বাজার ইজারার সিডিউল ক্রয় করি। ৫লক্ষ টাকা দর দিয়ে ও ২লক্ষ টাকা পে-অর্ডার যুক্ত করে নির্ধারিত তারিখে সিডিউল জমা দেই। সরকার নির্ধারিত মূল্যে থেকে কম মূল্য হওয়ায় বাজার ইজারা পাইনি। পে-অর্ডারের টাকা ফেরত নিয়ে আসি। পরে ওপেন ডাকে আমি ৬ লাখ ২৫হাজার টাকা নগদ জমা দিয়ে বাজার ইজারা পাই। তবে টাকা জমার কোন অফিসিয়াল রশিদ দেখাতে পারেনি ইজারার দাবীদার বিল্লাল মিয়া।
করিমপুর বাজার ইজারার বিষয়ে নরসিংদী সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার তাছলিমা আক্তার নরসিংদীর বাণীকে জানান, নির্ধারিত মূল্যের কম হওয়ায় বাজার ইজারা দেয়া হয়নি। সাবেক ইজারাদার বিল্লাল মিয়া অফিসে কোন নগদ টাকা জমা দেয়নি। ইজারার কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। ইজারা না হওয়া পর্যন্ত ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তাকে খাস আদায়ের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
করিমপুর ইউনিয়ন সহকারী ভূমি কর্মকর্তা মোসলেহ উদ্দিন নরসিংদীর বাণীকে জানান, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নির্দেশে গত ২১জুলাই থেকে করিমপুর বাজারে সরকার নির্ধারিত টোলচার্ট অনুযায়ী খাস আদায় করছি। খাস আদায়ের বিষয়টি বাজারের সকল ক্রেতা-বিক্রেতাদের অবহিত করেছি।
স্থানীয়রা জানায়, বিল্লাল মিয়া সরকারী নির্দেশনা অমান্য করে, বাজার ইজারা না নিয়ে এলাকার একজন বিশিষ্ট সমাজ সেবক এর লোক হিসেবে নিজেকে জাহির করে ও নরসিংদী সদর উপজেলা প্রশাসনের নাম ভাঙ্গিয়ে অবৈধভাবে ক্রেতা-বিক্রেতা ও বাজারের স্থায়ী ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে গত তিন মাস যাবত টোল আদায়ের নামে লক্ষ লক্ষ টাকা চাঁদা আদায় করেছে। সরকারীভাবে খাস আদায় শুরু হলে আমরা বাজার ইজারা না হওয়ার বিষয়টি জানতে পারি। বিল্লাল আমাদেরকে জানিয়েছে, সে এবারও বাজারের ডাক পেয়েছে। সরকারের রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে বাজার থেকে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। সরকারী ডাক না পেয়ে টাকা আদায় সম্পূর্ন অবৈধ এবং এটা চাঁদাবাজি। এ চাঁদাবাজ লুটেরাদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আমরা উপজেলা ও জেলা প্রশাসনের নিকট জোর দাবী জানাচ্ছি।