নরসিংদীতে সপ্তাহব্যাপী ঐতিহ্যবাহি বাউল মেলা চলছে
বাণী রিপোর্ট: নরসিংদীতে সপ্তাহব্যাপী ঐতিহ্যবাহি বাউল মেলা চলছে। ৫ শত বছরের পুরনো এই ঐতিহ্যবাহি বাউল মেলা শুক্রবার (০৭ ফেব্রুয়ারি) থেকে শুরু হয়েছে। দেশ বিদেশের শতাধিক বাউল শহরের কাউরিয়াপাড়ায় মেঘনা নদীর তীরে বাউল আখড়াধামের এ মেলায় অংশগ্রহন করেছেন। মেলা উপলক্ষে মেঘনার পাড়ে বাঙালির চিরচেনা গ্রামীণ মুখরোচক বিভিন্ন খাবারসহ পণ্যের পসরা সাজিয়ে বসেছেন স্থানীয় ও দূর-দূরান্ত থেকে আগত ব্যবসায়ীরা। নানা বয়সী দর্শনার্থীর ভীড়ে মুখর হয়ে উঠেছে মেলা প্রাঙ্গন।
বাউল ঠাকুরের আখড়া বাড়ী সূত্রে জানা যায়, আনুমানিক ৫ শত বছর আগে নরসিংদীতে এক বাউল ঠাকুরের আবির্ভাব হয়েছিল। বাউল ঠাকুর নিজেকে শুধু বাউল বলেই পরিচয় দিতেন। এজন্য বাউল ঠাকুরের প্রকৃত নাম জানেন না স্থানীয়রা। বাউল ঠাকুরের ঔরসজাত কেউ না থাকলেও বছরের পর বছর ধরে নরসিংদী শহরের কাউরিয়া পাড়ায় (নতুন লঞ্চঘাট) মেঘনা নদীর তীরে বাউল আখড়া ধামে অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে এই বাউল মেলা। তবে কে প্রথম এখানে বাউল মেলার আয়োজন করেন তার প্রকৃত তথ্য জানা নেই কারও। প্রবীণদের মতে পূর্ব ও পশ্চিম বাংলাই হচ্ছে বাউলদের আদি নিবাস।
সর্বশেষ ও বৃটিশ শাসনামল থেকে পাকিস্তান হয়ে বাংলাদেশ পর্যন্ত স্বর্গীয় মনিন্দ্র চন্দ্র বাউল এখানে মেলার আয়োজন করেছেন। বাউল পরিবার থেকে বর্তমানে এই মেলার আয়োজকদের মধ্যে রয়েছেন, সাধন চন্দ্র বাউল, মৃদুল বাউল মিন্টু, শীর্ষেন্দু বাউল পিন্টু, মলয় বাউল রিন্টু এবং প্রাণেশ কুমার ঝন্টু বাউল। প্রাণেশ কুমার ঝন্টু বাউল বর্তমানে নরসিংদীর বাউল আখড়া বাড়ীর তত্ত্বাবধায়ক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছেন।
প্রতি বছরের ন্যায় এবারও মেলা উপলক্ষে নরসিংদীর কাউরিয়াড়া লঞ্চঘাট সংলগ্ন মেঘনা নদীর তীরবর্তী মনোরম পরিবেশে প্রতিষ্ঠিত বাউলদের আখড়াধামে হাজির হয়েছেন পাশ্ববর্তী দেশ ভারতসহ দেশ-বিদেশের শতাধিক বাউল সাধক। মরমী এ সাধকদের কাছে সাধনাই মূল ধর্ম, আত্ম-শুদ্ধি আর আত্ম-মুক্তির জন্য এ মেলায় আসেন তারা এবং তুলে ধরেন মানব প্রেমের গান। পূণ্যস্নান, মহাযজ্ঞ ও পূজা অর্চণায় যোগ দিতে বিভিন্ন এলাকা থেকে বাউল ও পূণ্যার্থীর আগমন ঘটেছে মেলায়।
এদিকে বাউল মেলা উপলক্ষে দেশের নানা প্রান্ত থেকে ব্যবসায়ীরা গ্রাম বাংলার চিরচেনা মুখরোচক খাবার আমিত্তি, জিলেপী, সন্দেশ, বার মিঠাই, দধি, মুড়ালি, গুড়ের তৈরি মুড়ি ও চিড়ার মোয়া, তিলের মোয়া, তিলের সন্দেশ, খাস্তা, কদমা, নারকেলের নাড়ু, তিলের নাড়ু, খাজা, গজা, নিমকি, মনাক্কা, গাজরের হালুয়া, পিঠাসহ রকমারি খাবার এবং খেলনা, গৃহস্থালীর তৈজসপত্র, আসবাবপত্র, বিভিন্ন ধরণের তৈরি পোশাক, মাটি ও বাঁশের তৈরি জিনিসপত্রসহ নানা ধরণের পণ্যের স্টল নিয়ে বসেছেন।
বাউল আখড়া বাড়ীর তত্ত্বাবধায়ক প্রাণেশ কুমার ঝন্টু বাউল বলেন, প্রতি বছরের ন্যায় এবারও ৫শত বছরের পুরনো ঐতিহ্যবাহি এ মেলার আয়োজন করা হয়েছে। বাউল সম্প্রদায়ের নিয়ম অনুযায়ী মাঘি পূর্ণিমা তিথিতে এই মেলার আয়োজন করা হয়। কোন প্রকার প্রচারণা ছাড়াই প্রতি বছর ধর্মবর্ণ নির্বিশেষে হাজার হাজার মানুষের সমাগমে জমজমাট হয়ে উঠে এই মেলা।