২৪ দিনেও চিহ্নিত ছিনতাইকারীদের গ্রেফতার ও অটো উদ্ধার করতে পারেনি নরসিংদী সদর মডেল থানা পুলিশ
বাণী রিপোর্ট: ২৪ দিন অতিবাহিত হলেও চিহ্নিত ছিনতাইকারীদের গ্রেফতার ও ছিনতাইকৃত অটো উদ্ধার করতে পারেনি নরসিংদী সদর মডেল থানা পুলিশ। লিখিত অভিযোগ দেয়া সত্বেও মামলা হয়নি মডেল থানায়। নরসিংদী শহর এলাকায় প্রকাশ্যে অটো ছিনতাইয়ের এ ঘটনা ঘটে।
এ ঘটনায় ভুক্তভোগী অটোর মালিক ১ ডিসেম্বর নরসিংদী সদর মডেল থানায় লিখিত অভিযোগ করেন। এদিন সকাল ৭ টায় যাত্রীবেশি ৩ জন ছিনতাইকারী শহরতলীর হাজীপুর এলাকার সুজন সাহা, আকাশ মন্ডল ও স্বপন মিয়া নরসিংদী রেলস্টেশন থেকে অটোতে উঠে। তারা ড্রাইভারকে সরকারি মহিলা কলেজের সামনের রাস্তায় নিয়ে গাড়ী থামাতে বলে। পরে ড্রাইভারকে পিটিয়ে আহত করে ও ছোড়ার ভয় দেখিয়ে অটো ছিনতাই করে নিয়ে যায়। অটোর ড্রাইভার ছিনতাইকারীদের নাম ঠিকানা জানতো। ঘটনার পরক্ষণেই অটোর মালিক হাজীপুর গ্রামের সাবেক ইউপি সদস্য মোঃ ফারুক মিয়া ড্রাইভারকে সাথে নিয়ে নরসিংদী সদর মডেল থানায় গিয়ে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগকারী ছিনতাইকারীদের ফোন নম্বর সংগ্রহ করে দায়িত্বপ্রাপ্ত দারোগা আল আমিন এর নিকট দেন। দারোগা আল আমিন তাৎক্ষনিক ফোন নাম্বারগুলোতে ফোন করে ছিনতাইকারীদের শাসিয়ে অটো ফেরত দিতে আহ্বান জানান।
ঘটনার দুইদিন পর গত ৩ ডিসেম্বর অভিযোগকারী, ছিনতাইকারী আকাশ মন্ডল এর বাড়ীতে গিয়ে তার বাবা সুনিল মন্ডলকে নিয়ে থানায় আসে। সুনিল মন্ডল দারোগা আল আমিনের কাছে তার পুত্রের অটো ছিনতাইয়ের ঘটনা স্বীকার করে এবং অটো ফেরত দিতে ১ দিনের সময় নেয়। সময় নিয়ে আকাশ মন্ডলের বাবা পালিয়ে যায়।
গত ৫ ডিসেম্বর অভিযোগকারী এলাকার লোকজনকে সাথে নিয়ে ছিনতাইকারী দলের সদস্য সুজন সাহাকে আটক করে থানায় নিয়ে আসে। আটককৃত সুজন সকলের উপস্থিতিতে পুলিশের নিকট অটো ছিনতাই এর ঘটনা স্বীকার করে। সুজন পুলিশকে জানায় তারা ৩ জন অটোটি ছিনতাই করে অন্যত্র বিক্রি করে দিয়েছে। সে আরো স্বীকার করে ১, ৩ ও ৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত তারা ৩টি অটো ছিনতাই করেছে। প্রতিটি অটোর মূল্য প্রায় ১ লক্ষ ৬৫ হাজার টাকা।
সুনির্দিষ্ট অভিযোগ থাকা সত্বেও পুলিশ সুজনের বিরুদ্ধে অটো ছিনতাই মামলা না নিয়ে জেলা শিল্পকলা একাডেমির ৩৫ হাজার টাকা মূল্যের ল্যাপটপ চুরির ঘটনায় একটি মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে সুজনকে আদালতে সোপর্দ করে। গত ৬ ডিসেম্বর ল্যাপটপ চুরির মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা দারোগা সৈয়দ রুহুল আমিন সুজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আদালতে ৫ দিনের রিমান্ডের আবেদন করেন।
এ ব্যাপারে দারোগা আল আমিন জানান, সুজনের বিরুদ্ধে অটো ছিনতাইয়ের ঘটনায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। তাকে গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে। মামলার নাম্বার জানতে চাইলে তিনি তা দিতে পারেননি।
নরসিংদী সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সৈয়দুজ্জামান জানান, গ্রেফতারকৃত সুজনের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। মামলা নাম্বারের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি দারোগা আল আমিনের সাথে কথা বলে জানাবেন বলে জানান।
এদিকে অভিযোগকারী ফারুক মিয়া জানান, ঘটনার পর পর আমি থানায় লিখিত অভিযোগ করেছি। আসামী সুজনকে হাজীপুর কাঠ বাজার থেকে এলাকার লোকজনকে নিয়ে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করি। উপস্থিত শত শত জনতা ও পুলিশের নিকট সুজন স্বীকার করেছে অটো ছিনতাইয়ের কথা। শুধু তাই নয় আমার অটো ছিনতাইয়ের পর পুটিয়ার একটি অটো ও বুদিয়ামারা এলাকার একটি অটো তারা ছিনতাই করেছে বলে স্বীকার করেছে। ওই দুইজন ড্রাইভারকে তারা ধারালো অস্ত্র দিয়ে শরীরের বিভিন্ন জায়গায় আঘাত করে আহত করে অটো নিয়ে পালিয়ে যায়। তাদের একজন থানায় অভিযোগ করেছে। আমার অটো ছিনতাইয়ের ঘটনায় অভিযোগ দায়েরের ১৬ দিন পার হলেও পুলিশ তার বিরুদ্ধে কোন মামলা নেয়নি এবং অটো উদ্ধার করে দিতে পারেনি। পুলিশ আমাকে বলেছে আমরা চেষ্টা করেছি। তাকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসা করেছি। সে স্বীকার আসে নাই। আমি আশ্চর্যান্বিত হয়েছি। এলাকার মানুষের সামনে এবং থানায় পুলিশের সামনে অকপটে সুজন স্বীকার করেছে অটো ছিনতাইয়ের কথা। এ ঘটনায় আমি থানা থেকে কোন প্রকার সহযোগিতা না পেয়ে নরসিংদীর পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে অবস্থিত ডিবি পুলিশের অফিসে যাই। সেখানে আমি অটো ছিনতাইয়ের ঘটনা খুলে বলি এবং অটো উদ্ধারে ডিবি পুলিশের সহযোগিতা কামনা করি। কিন্তু ডিবি পুলিশও এগিয়ে আসেনি।
এদিকে গত ১৪ ডিসেম্বর শনিবার সন্ধ্যায় মদনগঞ্জ সড়কের ভাগদী এলাকায় একজন অটো চালককে মারধোর করে আহত করে এবং তাকে বিলের পানিতে ফেলে দিয়ে অটো ছিনিয়ে নেয় ছিনতাইকারীরা। আহত চালক নাজমুলকে যাত্রীবেশী ৩ জন ছিনতাইকারী রায়পুরার আমিরগঞ্জ থেকে উক্ত স্থানে নিয়ে আসে। নাজমুলের বাড়ি রায়পুরার হাসনাবাদ গ্রামে। সে সমিতি থেকে ঋণ নিয়ে অটো ক্রয় করে তা চালিয়ে সংসার চালাতো। একমাত্র রুটিরুজির অবলম্বন অটো ছিনতাই হওয়ায় সে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। একের পর এক অটো ছিনতাইয়ের ঘটনায় নরসিংদী সদর মডেল থানা পুলিশের টনক নরছেনা। অভিযোগ দায়ের করলেও অটো ছিনতাইয়ের মামলা থানায় রেকর্ড হচ্ছে না।