নরসিংদী সদর ইউএনও’র নির্দেশ অমান্য করে টোল আদায় করছে হাজীপুর কাঠবাজার ইজারাদার
নিজস্ব সংবাদদাতা: নরসিংদী সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার এএইচএম জামেরী হাসানের নির্দেশ উপেক্ষা করে টোল আদায় করে যাচ্ছে হাজীপুর বাজারের ইজারাদার বদরউদ্দিন। তাকে পর পর মৌখিক ও লিখিত নির্দেশ দেয়া সত্বেও টোল চার্ট স্থাপন করা থেকে বিরত রয়েছে। এতে প্রতারিত হচ্ছে ক্রেতা বিক্রেতারা। অবৈধভাবে টোল এর নামে চাঁদা আদায় করে মোটা অংকর টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে ইজারাদার।
কোন নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করে স্বেচ্ছাচারিতার মাধ্যমে ১০ বছর যাবত টোল আদায় করে যাচ্ছে ইজারাদার। এতে সরকার হারাচ্ছে রাজস্ব, ভুক্তভোগী হচ্ছে ক্রেতা ও বিক্রেতাগণ। এ ব্যাপারে গত ৫ মে বাজার ব্যবসায়ী সুজিত সূত্রধর জেলা ও উপজেলা প্রশাসনে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগের প্রেক্ষিতে গত ১৮ জুন বাজার পরিদর্শনে যায় উপজেলা নির্বাহী অফিসার কার্যালয়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মোঃ আব্দুল মোতালেব। তিনি বাজার ব্যবসায়ী ও ভোক্তাদের উপস্থিতিতে তদন্ত করতে গিয়ে অভিযোগের সত্যতা পান। অভিযোগের সত্যতা পাওয়া সত্বেও ইজারাদারের বিরুদ্ধে তাৎক্ষনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি উপজেলা প্রশাসন। তদন্ত কার্যক্রমের একটি ভিডিও চিত্র ভাইরাল হয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। এর পরেও টনক নড়েনি প্রশাসনের।
অভিযোগে বলা হয়, সরকারী নিয়ম অনুযায়ী বিক্রেতাগণ ইজারাদারের নিকট নির্দিষ্ট হারে টোল প্রদান করবেন। টোল চার্ট না থাকায় ইজারাদার তার ইচ্ছেমত টোল আদায় করছেন ক্রেতাদের নিকট থেকে। বাজারে টোল চার্ট সাটানো না থাকায় ক্রেতা সাধারণ জানতে পারছেন না কোন পণ্যের জন্য কত টাকা টোল দিতে হবে বা কে এই টোল পরিশোধ করবে। রশিদের মাধ্যমে টোল আদায় করার বিধান থাকলেও ইজারাদার স্বেচ্ছাচারিতার মাধ্যমে বিনা রশিদে টোল আদায় করে যাচ্ছেন। তদন্তকালে এ অভিযোগের বিষয়টি প্রমানিত হলেও তদন্তকারী কর্মকর্তা তা আমলে নেয়নি। তিনি উপস্থিত লোকজনের সামনে ইজারাদারের পক্ষে সাফাই গেয়েছেন। ফলে সরকারি দপ্তরের সেবা থেকে বঞ্চিত হয়েছে ক্রেতা ভোক্তাগণ। অভিযোগকারী জানান, এ বিষয়ে একাধিকবার নরসিংদী সদর উপজেলা প্রশাসনে যোগাযোগ করে টোল চার্ট সাটানো সম্ভব হয়নি। দুর্নীতিবাজ ইজারাদার বদরউদ্দিন সরকার (বদু) এর বিরুদ্ধে অজ্ঞাত কারণে ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়নি।
অভিযোগে জানা যায়, বিগত প্রায় ১০ বছর যাবত একটি সিন্ডিকেটের মাধ্যমে কমমূল্যে হাজীপুর কাঠবাজার ইজারা নিচ্ছেন বদরউদ্দিন সরকার (বদু)। চলতি বছর সিন্ডিকেটকে উপেক্ষা করে স্থানীয় এক ব্যক্তি বাজার ইজারা নেয়ার জন্য দরপত্র দাখিল করেন। বিগত বছরগুলোতে প্রায় ৩ লক্ষ টাকার মধ্যে ইজারা পেত বদরউদ্দিন সরকার (বদু)। এবার সিন্ডিকেট উপেক্ষা করে দরপত্র দাখিল করলে বাজারের সরকারি ইজারা মূল্য বেড়ে দাড়ায় ৫ লক্ষ টাকার অধিক। এতে সরকারী কোষাগারে অতিরিক্ত দুই লক্ষ টাকার অধিক রাজস্ব আদায় হয়। এ হিসাবে ১০ বছরে প্রায় ২৮ লক্ষ টাকা রাজস্ব বঞ্চিত হয়েছে সরকার। এই সিন্ডিকেটের সাথে এলাকার একটি প্রভাবশালী মহল জড়িত থাকায় দরপত্র কেনা থেকে বিরত থাকতে হতো ইজারা নিতে ইচ্ছুক প্রার্থীদের। এ বছর উক্ত সিন্ডিকেট অতিরিক্ত মূল্য দিয়ে বাজার ইজারা নিতে বাধ্য হয়। অভিযোগ করার পর ৭ মাস অতিবাহিত হলেও ইজারাদারের বিরুদ্ধে কোনপ্রকার ব্যবস্থা গ্রহন করেনি উপজেলা প্রশাসন।
এদিকে উক্ত ইজারাদার স্বেচ্ছাচারিতার মাধ্যমে তার সিন্ডিকেটভুক্ত লোকদের নিয়ে সরকারি জায়গা দখল করে বাজারে একাধিক দোকানপাট নির্মাণ করে তা ভাড়া দিয়ে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে।
দীর্ঘদিন পর টনক নড়ে উপজেলা প্রশাসনের। বাজারে টোলচার্ট টানানোর জন্য ইজারাদারকে লিখিত পত্র পাঠান নরসিংদী সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জামেরী হাসান। তিনি লিখিত পত্রে উল্লেখ করেন, উপযুক্ত বিষয়ের প্রেক্ষিতে জানানো যাচ্ছে যে বাজার পরিদর্শনে দেখা যায়, বাজারের কোথাও টোলচার্ট টানানো নেই। যার কারণে বাজারের ক্রেতাগণ টোলের পরিমান জানতে পারেনা বিধায় ইজারা গ্রহিতাগণ ইচ্ছেমতো টোল আদায় করে থাকেন। এ বিষয়ে বিভিন্ন মাধ্যমে অভিযোগ পাওয়া যায়। এমতাবস্থায় আগামী ৭ কার্যদিবসের মধ্যে আবশ্যিকভাবে টোল চার্ট টানিয়ে ছবি প্রেরণের জন্য অনুরোধ করা হলো। উপজেলা নির্বাহী অফিসার লিখিত পত্রে স্বাক্ষর করেন ১/১১/১৯ ইং তারিখে।
কিন্তু উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সিএ কাম ইউডি নাইম রহস্যজনক কারণে যথাসময়ে হাজিপুর কাঠ বাজার ইজারাদারকে না দিয়ে প্রায় ১ মাস ৩ দিন পর গত ৪/১২/১৯ ইং তারিখে উক্ত নোটিশ ইজারাদার বদরউদ্দিন সরকারের হাতে পৌছান। নোটিশ প্রাপ্তির পর নির্ধারিত সময়সীমা অতিক্রান্ত হলেও ইজারাদার উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নোটিশ কর্ণপাত করছেনা। সরকারি নির্দেশ উপেক্ষা করে স্বেচ্ছাচারিতার মাধ্যমে টোল আদায় করেছে। এ অবস্থায় সাধারণ ক্রেতা বিক্রেতাদের মনে প্রশ্ন জেগেছে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নির্দেশ বড়, নাকি ইজারাদারের স্বেচ্ছাচারিতাই বড়! এ ব্যাপারে ভুক্তভোগিরা প্রশাসনের কঠোর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। ইজারাদারকে আইন মানাতে বাধ্য করার জন্য প্রশাসনের নিকট অনুরোধ জানিয়েছেন।
অভিযোগ রয়েছে, উক্ত ইজারাদার স্বেচ্ছাচারিতার মাধ্যমে তার সিন্ডিকেটভুক্ত লোকদের নিয়ে সরকারি জায়গা দখল করে বাজারে একাধিক দোকানপাট নির্মাণ করে তা ভাড়া দিয়ে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। নির্মিত দোকানপাট এর জায়গা ব্যবসায়ীদের নিকট বন্দোবস্ত দিলে মূল্যবান রাজস্ব আদায় হতো। কিন্তু ইজারাদারের স্বেচ্ছাচারিতা ও দখলবাজির কারণে সরকার হারাচ্ছে মোটা অংকের টাকা রাজস্ব।